আজকের ক্লাসে আলোচনা করব বাংলা ব্যাকরণের কারক নিয়ে। বাংলা ব্যাকরণের কারক সহজে নির্ণয় করা শিখতে হলে প্রথমে আমাদেরকে কয়েকটি বিশেষ জ্ঞান রাখতে যেমন-
• ক্রিয়াপদ
• বিভক্তি
• অনুসর্গ বা পরসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয়
• নির্দেশক
ক্রিয়াপথ: বাক্যের মধ্যে যে পদটির দ্বারা থাকা করা হওয়া ইত্যাদি কাজ বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে।
তবে কারক নির্ণয় করতে হলে অবস্থানগত দুই রকম ক্রিয়াপদের (সমাপিকা ও অসমাপিকা) মধ্যে সমাপিকা ক্রিয়া পদটিকেই আগে নির্ণয় করতে হবে। কারণ সমাপিকা ক্রিয়াপদ হচ্ছে বাক্যের প্রাণ। সমাপিকা ক্রিয়াপদ ছাড়া বাক্যের অর্থ প্রকাশ পায় না। যেমন মা ভাইকে ভাত খেতে দিয়েছে এখানে দিয়েছে সমাপিকা ক্রিয়ার দ্বারা বাক্যের অর্থ প্রকাশ পায়। 'খেতে' অসমাপিকা ক্রিয়া দ্বারা নয়। আর কোন ক্রিয়াপদ না থাকলে কোন অর্থই প্রকাশ পায় না।বিভক্তি: বিভক্তি শব্দটির সাধারণ অর্থ বিভাগ বা ভাগ করা।
সংজ্ঞা: যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দ বা ধাতুর সহিত যুক্ত হয়ে পদগঠন করে সেই বর্ণসমষ্টিকে বিভক্তি বলে।
বিভক্তি চিহ্ন: অ/শূন্য, এ, তে, এতে, য়, কে, রে, এরে, র, এর ইত্যাদি।
শূন্য বিভক্তি: শূন্য বা অ বিভক্তির কোন চিহ্ন নেই। 'অ' বিভক্তি নামে অনেক বিতর্ক আছে। এই বিভক্তি সর্বসম্মত নয়। যেহেতু ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী বিভক্তি ছাড়া পথ হয় না। তাই শূন্য বিভক্তি আছে।
শূন্যবিভক্তি: যে বিভক্তি শব্দের পরে যুক্ত হয়ে শব্দকে পদে পরিণত করে, অথচ নিজের সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত থাকে, তাকে শূন্য বিভক্তি বলে।
শূন্যবিভক্তি: যে বিভক্তি শব্দের পরে যুক্ত হয়ে শব্দকে পদে পরিণত করে, অথচ নিজের সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত থাকে, তাকে শূন্য বিভক্তি বলে।
বিভক্তি আবার দুই প্রকার যথা- ১. শব্দ বিভক্তি ও ২. ধাতু বিভক্তি।
শব্দবিভক্তি: শব্দের পরে যে বিভক্তি যুক্ত হয়ে শব্দকে নাম পদে পরিণত করে তাকে শব্দ বিভক্তি বলে। যেমন- অ, কে, রা, এর, এ, তে, এতে ইত্যাদি।
প্রয়োগ- বনে থাকে বাঘ। বন+এ (বিভক্তি) = বনে পদ, বাঘ+অ (বিভক্তি) = বাঘ (পদ)।
প্রয়োগ- বনে থাকে বাঘ। বন+এ (বিভক্তি) = বনে পদ, বাঘ+অ (বিভক্তি) = বাঘ (পদ)।
ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি: যে বিভক্তি ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ধাতুকে ক্রিয়া পদে পরিণত করে তাকে ধাতু বিভক্তি বলে। যেমন- অ, ও, এ, এন, ই, ইল, ইতেছি, ইয়াছেন, ইত্যাদি।
প্রয়োগ- সে বই পড়ছে। √পড়্ (ধাতু) + ছে (বিভক্তি) = পড়ছে (ক্রিয়াপদ)।
অনুসর্গ বা পরসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয়: অনুসর্গ কথাটির অর্থ হল পরে ('অনু') অবস্থান ('সর্গ')।
সংজ্ঞা: যে সকল অব্যয় বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে পৃথকভাবে অবস্থান করে শব্দ বিভক্তির কাজ করে তাকে অনুসর্গ পরসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বলে। যথা- থেকে, চেয়ে, জন্য, নির্মিত, উদ্দেশ্য, হতে/হইতে, দ্বারা, দিয়া ইত্যাদি।
প্রয়োগ: গাছ থেকে পাতা ঝরে। (অপাদান কারক) আমার চেয়ে ভাই লম্বা।
সংজ্ঞা: যে সকল অব্যয় বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে পৃথকভাবে অবস্থান করে শব্দ বিভক্তির কাজ করে তাকে অনুসর্গ পরসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বলে। যথা- থেকে, চেয়ে, জন্য, নির্মিত, উদ্দেশ্য, হতে/হইতে, দ্বারা, দিয়া ইত্যাদি।
প্রয়োগ: গাছ থেকে পাতা ঝরে। (অপাদান কারক) আমার চেয়ে ভাই লম্বা।
নির্দেশক: বাক্যস্থিত পদের বচনকে সুনির্দিষ্ট করে নির্দেশক। গরিব+দের 👉 'দের' বহুবচন বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত নির্দেশক।
তাই বলা যেতে পারে বাক্যের পদাশ্রিত যেসব চিহ্ন একবচন বা বহুবচনকে স্পষ্ট করে তোলে তারাই হল নির্দেশক। একবচনকে বোঝানোর প্রয়জনে সংখ্যাবাচক টি, টা খানা, খানি, এবং বহুবচন রা, এরা, দের, গুলি, গুলো, প্রভৃতি পদাশ্রিত নির্দেশক বহুবচনে প্রযোজ্য হয়। আবার কখনো বহুবচন বোঝাতে গন, বৃন্দ, সব, সমূহ প্রভৃতি নির্দেশকও পদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। চলো একটি বাক্যে বিভিন্ন কারক চিহ্ন ব্যবহারের একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করি। ভূতের (ভূত+'এর' বিভক্তি) মতন (মতন অনুসর্গ) চেহারাটি (চেহারা+'টি' নির্দেশক) নিয়ে কোথায় যাচ্ছ।
এ ছাড়া মনে রাখবে, যে-বিভক্তি একাধিক কারকে প্রযুক্ত হয় তাকে তির্যক বিভক্তি বলে। যেমন: 'এ' বিভক্তিটি বিশেষত অধিকরণ কারকের -বিভক্তি-চিহ্ন হলেও, যে-কোনো কারকেই প্রযুক্ত হয়ে যে-কোনো পদকেই তির্যকভাবে অন্বিত করায়, তাকে তির্যক বিভক্তি বলা হয়। কত ধানে কত চাল (অপাদান)। এ কলমে লেখা যায় না (কর্ম)। রাজা গেলেন শিকারে (নিমিত্ত) ইত্যাদি। তবে ‘কে', ‘তে' প্রভৃতি অধিকাংশ বাংলা বিভক্তিই এই শ্রেণির।
কারক বিভক্তি
কারক শব্দটির ইংরেজি case (কেয়স্) শব্দ লাতিন casus (কাসুস) শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। Casus অর্থে 'পতন'। পতন অর্থে কাজ বা ক্রিয়া বোঝায়।
কারক শব্দটির ইংরেজি case (কেয়স্) শব্দ লাতিন casus (কাসুস) শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। Casus অর্থে 'পতন'। পতন অর্থে কাজ বা ক্রিয়া বোঝায়।
কারক নির্ণয় করার আগে ক্রিয়াকে প্রশ্ন করা শিখতে হবে তবেই কিন্তু কারক নির্ণয় করতে পারবেন। কারকে কীভাবে প্রশ্ন করবেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
কর্তৃকারক - কে/কারা
কর্মকারক - কী/কাকে
করণকারক - কী দ্বারা/কীসের দ্বারা
নিমিত্ত কারক - কাকে/জন্য
অপাদান কারক - কোথা হতে/কোথা থেকে (পাপ,ভয়,বিপদ)
অধিকরণ কারক - কোথায়/কখন (নির্দিষ্ট স্থান, সময়, বিষয়)
চলো একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করা যাক।রানী ভবানী প্রতিদিন প্রভাতে ভান্ডার হইতে স্বহস্তে দীনদুঃখীকে ধন রত্ন দান করিতেন।
উপরের বাক্যটিতে দান করিতেন এই সমাপিকা ক্রিয়াকে প্রশ্ন কর কে দান করিতেন? উত্তর পাবে - রানী ভবানী। কী দান করিতেন? - ধনরত্ন। কিসের দ্বারা দান করিতেন? - স্বহস্তে। কাকে দান করিতেন? - দিনদুঃখীকে। কোথা থেকে দান করিতেন? - ভান্ডার থেকে। কখন দান করিতেন? - প্রভাতে। অতএব দান করিতেন ক্রিয়াটির সহিত রানী ভবানী, ধনরত্ন, স্বহস্তে, দীনদুঃখীকে, ভান্ডার থেকে, প্রভাতে প্রতিটি পদেরই কোনো না কোনো সম্পর্ক রয়েছে। আর এই সম্পর্কগুলি যে একিইপ্রকারের নয়, প্রশ্ন বিভিন্ন ধরনেরই তা প্রকাশ পেয়েছে। ক্রিয়ার সহিত বাক্যের অন্তর্গত নামপদের এই যে সম্পর্ক ইহাই কারক।
কর্তৃকারক - কে/কারা
কর্মকারক - কী/কাকে
করণকারক - কী দ্বারা/কীসের দ্বারা
নিমিত্ত কারক - কাকে/জন্য
অপাদান কারক - কোথা হতে/কোথা থেকে (পাপ,ভয়,বিপদ)
অধিকরণ কারক - কোথায়/কখন (নির্দিষ্ট স্থান, সময়, বিষয়)
রানী ভবানী প্রতিদিন প্রভাতে ভান্ডার হইতে স্বহস্তে দীনদুঃখীকে ধন রত্ন দান করিতেন।
উপরের বাক্যটিতে দান করিতেন এই সমাপিকা ক্রিয়াকে প্রশ্ন কর কে দান করিতেন? উত্তর পাবে - রানী ভবানী। কী দান করিতেন? - ধনরত্ন। কিসের দ্বারা দান করিতেন? - স্বহস্তে। কাকে দান করিতেন? - দিনদুঃখীকে। কোথা থেকে দান করিতেন? - ভান্ডার থেকে। কখন দান করিতেন? - প্রভাতে। অতএব দান করিতেন ক্রিয়াটির সহিত রানী ভবানী, ধনরত্ন, স্বহস্তে, দীনদুঃখীকে, ভান্ডার থেকে, প্রভাতে প্রতিটি পদেরই কোনো না কোনো সম্পর্ক রয়েছে। আর এই সম্পর্কগুলি যে একিইপ্রকারের নয়, প্রশ্ন বিভিন্ন ধরনেরই তা প্রকাশ পেয়েছে। ক্রিয়ার সহিত বাক্যের অন্তর্গত নামপদের এই যে সম্পর্ক ইহাই কারক।
কারক: বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়া পদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলা হয়।
আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে কারক ছয় প্রকার:
আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে কারক ছয় প্রকার:
- কর্তৃকারক
- কর্ম - কারক
- করণ কারক
- সম্প্রদান কারক
- অপাদান কারক
- অধিকরণ কারক
আমাদের প্রদত্ত উদাহরণের রানী ভবানী - কর্তৃকারক, ধনরত্ন - কর্মকারক, স্বহস্তে করণকারক, দিন দুঃখী কে সম্প্রদান কারক, ভান্ডার থেকে অপাদান কারক, প্রভাতে অধিকরণ কারক।
মনে রেখো কেবল বিশেষ ও সর্বনাম পদেরই কারক হয়। তবে বিশেষণপদ বিশেষ্য রূপে ব্যবহৃত হলে তাহারও কারক হবে। আমি তোমার সাতেও নেই, পাঁচেও নেই। "দশে মিলে করি কাজ"। কানাকে কানা বললে রাগ হওয়াই তো স্বাভাবিক। বড়দের শ্রদ্ধা ভক্তি করবে। এখানে সাত পাঁচ, দশ, কানা, বড় প্রভৃতি বিশেষণে বিভক্তি চিহ্ন যুক্ত হওয়ায় পদগুলি বিশেষ্যের মতো ব্যবহৃত হয়েছে।
আমাদের প্রদত্ত উদাহরণের রানী ভবানী - কর্তৃকারক, ধনরত্ন - কর্মকারক, স্বহস্তে করণকারক, দিন দুঃখী কে সম্প্রদান কারক, ভান্ডার থেকে অপাদান কারক, প্রভাতে অধিকরণ কারক।
কর্তৃকারক: যে বা যারা স্বয়ং কোন ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে বা তাহাদেরকে কর্তৃ-কারক বলে।
- ছেলেরা মাঠে ফুটবল খেলে (বহুবচনে রা বিভক্তি)
- মা শিশুকে চাঁদ দেখায়। (মা শূন্য বিভক্তি)
- গাছ থেকে পাতা ঝরে। (শূন্য বিভক্তি)
- ডাক্তার এলেন। (শূন্য বিভক্তি)
- বুলবুলিতে ধান খেয়েছে। (তে বিভক্তি)
- পাগলে কিনা বলে। (এ বিভক্তি)
- খোকা ঘুমালো। (শূন্য বিভক্তি)
- মা ভাইকে ভাত দেয়। (কে বিভক্তি)
- বাবা আমাকে একটা কলম কিনে দিয়েছে। (শূন্য বিভক্তি)
কর্মকারক: কর্তা যাকে আশ্রয় করে ক্রিয়ার সম্পাদন করে তাই কর্মকারক।
কর্মকারক চিনতে হলে ক্রিয়াকে কি, কাকে, কোনটি ইত্যাদি প্রশ্ন করে যে উত্তর পাবে সেই উত্তরই কর্মকার।
- রাহুল গল্পের বই পড়ে। (শূন্য বিভক্তি)
- ডাক্তার ডাকো। (শূন্য বিভক্তি)
- মা দাদাকে মোবাইল কিনে দিয়েছে। (শূন্য বিভক্তি)
- তপনবাবু তপনকে বিজ্ঞান পড়ান। (শূন্য বিভক্তি)
কর্মকারক চিনতে হলে ক্রিয়াকে কি, কাকে, কোনটি ইত্যাদি প্রশ্ন করে যে উত্তর পাবে সেই উত্তরই কর্মকার।
- রাহুল গল্পের বই পড়ে। (শূন্য বিভক্তি)
- ডাক্তার ডাকো। (শূন্য বিভক্তি)
- মা দাদাকে মোবাইল কিনে দিয়েছে। (শূন্য বিভক্তি)
- তপনবাবু তপনকে বিজ্ঞান পড়ান। (শূন্য বিভক্তি)
করণ-কারক: কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে করণ-কারক বলে।
- টাকায় বাঘের দুধ পাওয়া যায়। (য় বিভক্তি)
- এত মোটা কলমে লেখা যায়। (এ বিভক্তি)
- দেখো, ছুরিতে যেন আঙ্গুল কেটো না। (তে বিভক্তি)
- ট্যাক্সিতে এলাম বাসে যা ভিড়। (তে বিভক্তি)
- সে কানে শোনে না। (এ বিভক্তি)
- ছেলেরা ফুটবল খেলে। (শূন্য বিভক্তি)
- চোখের জলে বই ভিজিয়ে দিল। (এ বিভক্তি)
সম্প্রদান কারক: যাকে কোন কিছু নিস্বার্থভাবে দান করা যায় দানের সেই পবিত্র পাত্রকে সম্প্রদান কারক বলে।সম্প্রদান কারক হল একই বাক্যে সম্প্রদান কারক ও মুখ্য কর্ম পাশাপাশি থাকে। সাম্প্রদান কারক মুখ্য কর্মের পূর্বে বসে।- দীনদুঃখীকে অন্নবস্ত্রদান পরমধর্ম। (কে বিভক্তি)
- মহিলা সমিতিতে কত চাঁদা দেবেন? (তে বিভক্তি)
- সৎপাত্রে কন্যা দান। (এ বিভক্তি)
- গরিবকে দুটো পয়সা দিন বাবু। (কে বিভক্তি)
এখানে দীনদুঃখী, সমিতি, ইত্যাদি সম্প্রদান কারক কারণ এখানে যে দানগুলো করা হচ্ছে সেগুলো সব পবিত্র দান বা নিঃস্বার্থভাবে দান করা।
সম্প্রদান ও গৌণ কর্মের বিভক্তি চিহ্ন এক হওয়ার ফলে অনেক সময় কারক নির্ণয়ের সংশয় জাগে।বৃষ্টি হচ্ছিল বলে গজেন আমায় (গৌণ কর্ম) ছাতাখানা দিল- জমিদারকে খাজনা দেওয়া।
- চাকরকে মাইনে দেওয়া।
- দোকানেকে টাকা দেওয়া।
- ডাকাতকে সর্বস্ব দেওয়া।
- পুলিশকে ঘুষ দেওয়া।
জমিদার, চাকর ইত্যাদি সম্প্রদান নয় গৌণ কর্ম। কারণ এখানে দেওয়া কাজটি আদৌ পবিত্র নয়। এই দেওয়ার পশ্চাতে বাধ্যবাধকতা, ভীতি, স্বার্থপরতা ইত্যাদি কাজ করছে। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত নিঃস্বার্থ দানের নামগন্ধও এখানে নাই।
- টাকায় বাঘের দুধ পাওয়া যায়। (য় বিভক্তি)
- এত মোটা কলমে লেখা যায়। (এ বিভক্তি)
- দেখো, ছুরিতে যেন আঙ্গুল কেটো না। (তে বিভক্তি)
- ট্যাক্সিতে এলাম বাসে যা ভিড়। (তে বিভক্তি)
- সে কানে শোনে না। (এ বিভক্তি)
- ছেলেরা ফুটবল খেলে। (শূন্য বিভক্তি)
- চোখের জলে বই ভিজিয়ে দিল। (এ বিভক্তি)
- দীনদুঃখীকে অন্নবস্ত্রদান পরমধর্ম। (কে বিভক্তি)
- মহিলা সমিতিতে কত চাঁদা দেবেন? (তে বিভক্তি)
- সৎপাত্রে কন্যা দান। (এ বিভক্তি)
- গরিবকে দুটো পয়সা দিন বাবু। (কে বিভক্তি)
এখানে দীনদুঃখী, সমিতি, ইত্যাদি সম্প্রদান কারক কারণ এখানে যে দানগুলো করা হচ্ছে সেগুলো সব পবিত্র দান বা নিঃস্বার্থভাবে দান করা।
- জমিদারকে খাজনা দেওয়া।
- চাকরকে মাইনে দেওয়া।
- দোকানেকে টাকা দেওয়া।
- ডাকাতকে সর্বস্ব দেওয়া।
- পুলিশকে ঘুষ দেওয়া।
জমিদার, চাকর ইত্যাদি সম্প্রদান নয় গৌণ কর্ম। কারণ এখানে দেওয়া কাজটি আদৌ পবিত্র নয়। এই দেওয়ার পশ্চাতে বাধ্যবাধকতা, ভীতি, স্বার্থপরতা ইত্যাদি কাজ করছে। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত নিঃস্বার্থ দানের নামগন্ধও এখানে নাই।
অপাদান কারক: যাহা হতে কোন ব্যক্তি বা বস্তু পতিত চলিত ভীত গৃহীত রক্ষিত উৎপন মুক্ত অন্তর্হিত বঞ্চিত বিরত ইত্যাদি হয় তাকে অপাদান কারক বলে।
- মেঘে বৃষ্টি হয়। (শূন্য বিভক্তি)
- বিপদে মোরে রক্ষা করো। (এ বিভক্তি)
- চোখ দিয়ে জল পড়ে। (শূন্য বিভক্তি)
- গাছ থেকে পাতা পড়ে (শূন্য বিভক্তি)
- কথাটা শুনে ভদ্রলোক যেন আকাশ থেকে পড়লেন। (শূন্য বিভক্তি)
- ছাদ দিয়ে এখনো কি জল ঝরে? (শূন্য বিভক্তি)
- মেঘে বৃষ্টি হয়। (শূন্য বিভক্তি)
- বিপদে মোরে রক্ষা করো। (এ বিভক্তি)
- চোখ দিয়ে জল পড়ে। (শূন্য বিভক্তি)
- গাছ থেকে পাতা পড়ে (শূন্য বিভক্তি)
- কথাটা শুনে ভদ্রলোক যেন আকাশ থেকে পড়লেন। (শূন্য বিভক্তি)
- ছাদ দিয়ে এখনো কি জল ঝরে? (শূন্য বিভক্তি)
অধিকরণ কারক: যে স্থানে বা যে সময়ে কোন ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়, ক্রিয়ার সেই আধারকে অধিকরণ কারক বলে।
বনে থাকে বাঘ। (এ বিভক্তি)গায়ে তার চাকা চাকা দাগ। (এ বিভক্তি)
গাছে থাকে পাখি (এ বিভক্তি)
জলে থাকে মাছ। (এ বিভক্তি)
মাঠে থাকে ধান। (বিভক্তি)
পৃথিবীতে এমন অবলোকিক ঘটনাও ঘটে? (তে বিভক্তি)
সম্বন্ধপদ: পূর্ববর্তী বিশেষের সহিত কোন সম্বন্ধ থাকলে র বা এর বিভক্তিযুক্ত পূর্ববর্তী বিশেষ্য বা সর্বনামকে সম্বন্ধপদ বলা হয়। সম্বন্ধপদের বিভক্তি চিহ্ন কখনই লোক পাই না।
- হাঁসের ডিম (এর বিভক্তি)
- মাস্টারের ছেলে (এ বিভক্তি)
- গরুর বাচ্চা (র বিভক্তি)
- রাহুলের বই (র বিভক্তি)
- মন্দিরের ঘন্টা (এর বিভক্তি)
- মসজিদের দরজা (এর বিভক্তি)
- রাজার ছেলে (র বিভক্তি)
- মিস্ত্রির ছেলে (র বিভক্তি)
সম্বোধনপদ
"মা আমায় মানুষ করো"। ওরে ভজা দেখে যা। " ভাগিনা একই কথা শুনে"। " না সখি! ভীত হইও না"। "হে অতীত, তুমি হৃদয়ে আমার কথা কও, কথা কও"। সম্বোধন কথাটির অর্থ হচ্ছে বিশেষভাবে ডাকা। প্রথম বাক্যে মাকে ডাকা হচ্ছে; তাইমা পথটি সম্বোধনপথ। কিন্তু এই মা পথটির সঙ্গে বাক্যের অন্য কোন পদের সম্পর্ক নাই। বাক্যটির উদ্দেশ্য (কর্তৃকারক) তুমি উহ্য আছে। দ্বিতীয় বাক্যে ভজাকে ডাকা হচ্ছে বলে ওরে ভজা সম্বোধনপদ। এখানেও বাক্যটির কর্তা তুমি উহ্য। শেষ বাক্যের সম্বোধনপথ হে অতীত, কর্তা তুমি।
সম্বোধনপদ: যে পদে কাউকে আহবান করা বোঝায় সেই পথকে সম্বোধনপদ বলে। চলো আরও কিছু উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক।
- ওল, খুকি শুনে যা।
- ও মা, তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি।
- ওহে প্রাণনাথ গিরিবর হে।
- হে পিতৃব্য, তবে বাক্য ইচ্ছে মরিবার।
- ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।
- ও ভাই কর্মকার - আমারে পুড়িয়ে পেটানো ছাড়া কি নাইকো কর্ম আর!
- মহাশয়, আমরা বহু কালের অসভ্য জাতি।
- রতন, তুমি আগামীকাল এস।
0 Comments